Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

জেলার ঐতিহ্য

প্রাচীন মসজিদের ইতিহাস :

বৃহত্তর খুলনা জেলায় অনেক প্রাচীন মসজিদ আছে। ইতিহাসের আলোকে বিচার করলে দেখা যায়, সামসুদ্দিন ফিরোজ শাহ (১৩১০-১৩২৫) প্রথম খুলনা আগমন করেন। সামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহের সময়ে (১৩৪২-১৩৫৮) খুলনা অঞ্চলে মুসলমানদের আগমন ঘটে। তারপর হযরত খান জাহান আলী (রা.) (--------১৪৫৯) এ অঞ্চলে মুসলিম শাসন চালু করেন। সুলতান শাহ সুজার আমলে এ অঞ্চলের বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছিল জিয়াদখানা নামে। তার নাম ছিল সুন্দরবন। বৃহত্তর খুলনা জেলায় শ' শ' বছর আগে ইসলাম প্রচারক ও মুসলিম শাসক কর্তাদের আগমনের সাথে সাথে তাঁরা অনেক মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। এ মসজিদগুলোর নির্মাণ কৌশল চমৎকার তাছাড়া স্থাপনা শিল্পের এক অনন্য নিদর্শন হিসেবে বিবেচিত। এগুলোকে প্রাচীন মসজিদ বলা হয়। বৃহত্তর খুলনা জেলায় এ ধরণের কতটি মসজিদ ছিল তার সঠিক হিসেব পাওয়া যায় না। বেশ কিছু সংখ্যক প্রাচীন মসজিদ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বিলীন হয়ে গেছে। কালের সাথে যুদ্ধ করে যে সব প্রাচীন মসজিদ টিকে আছে তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ বর্তমান খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলাভিত্তিক তুলে ধরা হলো। বর্তমানে খুলনা জেলায় মোট মসজিদের সংখ্যা ১ হাজার ৩শত ৭৪টি। তার মধ্যে প্রাচীন মসজিদের সংখ্যা ৮টি। মসজিদকুড় মসজিদ : খুলনা মহানগরী থেকে ৯০ কিলোমিটার দক্ষিণে কয়রা উপজেলায় আমাদী গ্রামে মসজিদকুড় মসজিদ অবস্থিত। এটি নির্মাণ করেছিলেন হযরত খানজাহান আলীর (র.) একান্ত সহচর হযরত বুড়ো খাঁ (র.)। তিনি ধর্ম প্রচারের সাথে রাজ্য শাসন ও জমি পত্তন করতেন। মসজিদটি সুন্দরবনের অবিস্মরণীয় কীর্তি। এটি বর্গাকার। এর প্রত্যেক বাহুর দিকে ৫৪ ফুট ও ভিতরের দিকে ৪০ ফুট লম্বা। মসজিদের তিনটি প্রবেশপথ আছে। মসজিদের পশ্চিম দেয়ালে আছে তিনটি মেহরাব। আছে চারটি মিনার। মসজিদটির বাইরের দেয়ালে দক্ষিণ পূর্ব ও উত্তর দিকে পোড়া মাটির চিত্র ফলকের দ্বারা অংকিত ছিল। মসজিদের মধ্যে ৪টি প্রস্তর স্তম্ভ আছে। আরো আছে ৯টি গম্বুজ। গম্বুজের নির্মাণ কৌশল খুবই চমৎকার।

আরশ নগরের মসজিদ : খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার আরশনগর গ্রামে একটি মসজিদ আছে। মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল ইংরেজি ১৫০০ সালে। যতদূর জানা যায়, এ মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন পিরে কামেল শেখ শাহ আফজাল (র.) তিনি হযরত খানজাহান আলীর (র.) সাথে ইসলাম প্রচারে এসেছিলেন। এক পর্যায়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে মসজিদটি ধ্বংস স্তুপে পরিণত হয়। ১৯৮৩ সালে ধ্বংস স্তুপ থেকে মসজিদটি উদ্ধার করে সংস্কার করা হয়। মসজিদের ভিতর থেকে একটি শিলা লিপি উদ্ধার করা হয়। তাতে একটি হাদিস লেখা আছে। বর্তমানে শিলা লিপিখানি রাজশাহী বরেন্দ্র জাদুঘরে রক্ষিত আছে।

বেতকাশী মসজিদ : কয়রা উপজেলায় বেতকাশি গ্রামে একটি মসজিদ নির্মিত হয়েছিল হযরত খানজাহান আলীর (র.) সময়ে। এটি নির্মাণ করেছিলেন তার একান্ত সহচর হযরত খালেক খাঁ (র.) মসজিদটি কারুকার্য খচিত করে নির্মাণ করা হয়েছিল।

সোলায়মান পুরের মসজিদ : পাইকগাছা উপজেলায় সোলায়মানপুর গ্রামে একটি মসজিদ নির্মিত হয়েছিল হযরত খানজাহান আলীর (র.) আমলে। এটি নির্মাণ করেছিলেন তার সাথে আসা এক শিষ্য হযরত বোরহান উদ্দিন খান (র.)। মসজিদটি খুবই সুন্দর ছিল।

আলাইপুরের মসজিদ : রূপসা উপজেলার আলাইপুরে একটি প্রাচীন মসজিদ আছে। মসজিদটি দেখতে খুবই চমৎকার। তবে মসজিদটি কে নির্মাণ করেছিলেন তার সঠিক ইতিহাস এখনো অনুদঘাটিত। তবে এটি খানজাহান আলীর (র.) সময় নির্মিত হয়েছে বলে বিজ্ঞজনেরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

চিংড়া মসজিদ : ডুমুরিয়া উপজেলার চিংড়া গ্রামে একটি প্রাচীন মসজিদ আছে। মসজিদটি কে নির্মাণ করেছেন তার সঠিক তথ্য জানা যায় না। অনেকের ধারণা এ মসজিদটিও খানজাহান আলীর (র.) সময়ে নির্মিত হয়েছিল। এ মসজিদ নিয়ে অনেক অলৌকিক কথা শোনা যায়।

টাউন জামে মসজিদ : খুলনা মহানগরীর সবচেয়ে পুরানো মসজিদ টাউন জামে মসজিদ। এ মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল ১৮৫৪ সালে। এটি ভৈরব নদের পাড়ে কেডি ঘোষ রোডের পূর্ব দিকে অবস্থিত। মসজিদটি দেখতে খুবই সুন্দর।

টুটপাড়া জামে মসজিদ : নগরীর টুটপাড়া বড় পুরানো জামে মসজিদটি ১৮৮০ সালে নির্মিত হয়। এ মসজিদটি দেখতে খুব সুন্দর।

বায়তুন নূর মসজিদ : নগরীর সবচেয়ে আধুনিক মসজিদ হচ্ছে বায়তুন নূর মসজিদ কমপ্লেক্স। মসজিদটি ১৯৮০ সালের ২২ নবেম্বর তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. নূরুল ইসলামকে   সভাপতি করে এই মসজিদ নির্মাণের প্রথম কমিটি গঠন করা হয়। ১৯৯২ সালের ১৮ ডিসেম্বর তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ.এস. এম মোস্তাফিজুর রহমান মসজিদটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এ মসজিদে এক সাথে ৬ হাজার মুসল্লি নামায আদায় করতে পারেন। মহিলাদের জন্যও মসজিদটিতে আছে আলাদা নামাযের স্থান। এছাড়া মসজিদটির তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় আছে মাদরাসা ও ইসলামী পাঠাগার। মসজিদটির মিনার ১৩৮ফুট উচ্চতা।

ঈদ জামাতের ইতিহাস : রোজার ঈদ মুসলিম জাহানের একটি উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় উৎসব। পবিত্র রমজান মাসের ও সংযম সাধনের পর আরবি শাওয়াল মাসের ১ তারিখে ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর মদিনায় হিযরতের পর থেকে ঈদ উৎসব পালিত শুরু হয়। আর আজকের বাংলাদেশের প্রথম কোথায় ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছিল তার সঠিক কোন ইতিহাস পাওয়া যায় না। ইদ্রিসুর রহমান ‘ঈদুল ফিতর' বাংলার প্রাচীন উৎসবগুলোর অন্যতম। কিন্তু প্রাচীনকালে ঈদের দিনটি কিভাবে পালন করতো সে সম্পর্কে কিছু জানা যায় না। ১৭শ' শতকের দিকে বাংলার নবাবরা এবং বিত্তবানরা ঈদ উৎসব জাঁকজমকভাবে পালন করতেন। মোগল আমলে মোগলরা ঈদ উৎসব পালন করতেন। এসময় গ্রামের মুসলমানরা ছিলো দরিদ্র। ইসলাম সম্পর্কে তাদের বিশুদ্ধ জ্ঞানও ছিলো না। ফরায়জী আন্দোলনের পর থেকে ইসলাম সম্পর্কে সাধারণ মুসলমানরা জানতে শেখে। ইংরেজ আমলের প্রধান উৎসব ছিলো ক্রিসমাস। তখন মুসলমানরা ঈদের অতিরিক্ত ছুটির জন্য আবেদন করলেও ইংরেজরা তাতে কর্ণপাত করেনি। ওই সময় বিত্ত-বিদ্যার দিক দিয়ে তুলনামূলকভাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা হিসেবে অনেক এগিয়ে ছিলো। ফলে দুর্গাপূজাও সম্প্রদায়গত আধিপত্য এবং ঐতিহ্যের কারণে হয়ে উঠলো সবচেয়ে জাঁকালো এবং গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব। এরপর মুসলমান সম্প্রদায় রাজনীতিতে এলে ঈদ উৎসব নতুন মর্যাদা পায়। আজ আমরা যে ঈদের জন্যে অধির আগ্রহে অপেক্ষা করি, প্রধান ধর্মীয় উৎসব বলে জানি এবং বড় উৎসবের ইতিহাস মাত্র ৮০ থেকে ১০০ বছরের পুরানো। বিশ শতকের স্বাতস্ত্র্য আন্দোলন শুরু হলে ঈদ উৎসব নতুনভাবে গুরুত্ব লাভ করে। ১৯৪৭ সালে পাক-ভারত বিভক্ত হওয়ার পর বাংলাদেশে দু'টি ঈদই জাতীয় ধর্মোৎসব রূপান্তরিত হয় এবং রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে। আর খুলনা মহানগরীর এলাকার মধ্যে প্রথম কোথায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় তার কোন সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। তবে বৃটিশ আমলের আগে থেকে খোলা জায়গায় ঈদের জামাত হতো বলে জানা যায়। হযরত খানজাহান আলী (র.) খুলনা অঞ্চলের ইসলাম প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। তখন থেকেই খুলনা মহানগরী এলাকার মধ্যে মুসলমানদের বসবাস শুরু হয়েছিলো। মহানগরীর দৌলতপুর ও খালিশপুর একটি প্রাচীন স্থান। এ দু'টি নামের সাথে দু'জন মুসলিমের নাম জড়িত। দৌলত খাঁ থেকে নাকি দৌলতপুর নাম হয়েছিলো। আর হযরত উলুগ খান-ই-জাহানের একজন বিশেষ সহচর ছিলেন খালাশ খান। তিনি নাকি আজকের খালিশপুর এলাকায় বসতি স্থাপন করে অনেক লোককে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। তার নামানুসারে নাকি খালাশ খান থেকে খালিশপুর নাম হয়েছে। তবে সে সময়ে মুসলমানরা এখানে কিভাবে ঈদ উৎসব পালন করতেন তার কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। অপরদিকে মহানগরী এলাকার মধ্যে কখন প্রথম মুসলমানদের বসবাস শুরু হয় তার ইতিহাসও ধূসর। খুলনা মহানগরীর প্রধান ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় খুলনা সার্কিট হাউজ ময়দানে। এটি মহানগরীর সবচেয়ে বড় জামাত। লক্ষাধিক মুসল্লি এ জামাতে ঈদের নামায আদায় করেন। খুলনা সার্কিট হাউস ময়দানের ঈদের জামাতে মন্ত্রী, মেয়র, এমপি, খুলনা মহানগরীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ সর্বস্তরের মুসলমান শরীক হন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খুলনা মহানগরী এলাকায় বৃটিশ আমলে যেখানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হতো তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো : খুলনা টাউন জামে মসজিদ (১৮৫৪)। ১৮৬৫ সাথে টাউন জামে মসজিদে খুলনায় প্রথম ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া টুটপাড়া বড় পুরানো জামে মসজিদে(১৮৮০), শেখপাড়া আস্তানা মসজিদ, হাজি বাড়ি মসজিদে, বানিয়া খামার পশ্চিম পাড়া মসজিদে ও দৌলতপুরের সাহিত্যিক ডা. আব্দুল কাসেমের বাড়ির কাছের ঈদগাহসহ আরো কয়েকটি স্থানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হতো।

শিক্ষা : শিক্ষার প্রসারেও খুলনা জেলার গুরুত্ব অপরিসীম। এ জেলায় ৬২৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৪৬১টি রেজিস্ট্রার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩৪টি কমিউনিটি বিদ্যালয়, ৯টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ২০টি বেসরকারি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৬৪টি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৬টি সরকারি কলেজ, ১০৪টি দাখিল মাদরাসা, ১৬টি আলিম মাদরাসা, ১২টি ফাজিল মাদরাসা, ৩টি কামিল মাদরাসা, একটি পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট, একটি সরকারি কৃষি কলেজ, একটি মেডিকেল কলেজ ও ২টি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। এছাড়া বেসরকারি কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ও লেদার টেকনোলজি ইনস্টিটিউট রয়েছে। খুলনা শহরে প্রথম প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৮৮০ সালে ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় ‘খুলনা জিলা স্কুল' ১৮৮৫ সালে স্থাপিত হয়। শুরুতে প্রাথমিক বিদ্যালয়টির নাম ছিল কালাচাঁদের পাঠশালা (টুটপাড়া)। এ শহরে ১৯০২ সালে প্রথম কলেজ স্থাপিত হয়। আজকের সরকারি বিএল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজটির নাম ছিল ‘হিন্দু একাডেমী'। নগরীর অন্যতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আযমখান সরকারি কমার্স কলেজ। ১৯৫৮ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর লেঃ জেনারেল আযম খানের নামে কলেজটি স্থাপিত হয়। দেশের বাণিজ্য শিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখে চলেছে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি।

 

অফিস-আদালত :

দেশের তৃতীয় বৃহত্তম শহর খুলনা বিভাগীয় সদর। এ বিভাগের অন্তর্ভুক্ত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দশটি জেলা। এখানে বিভাগীয় কমিশনারের সচিবালয়, উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক ও মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়, কালেক্টরেট ভবন, জজকোর্ট, খুলনা জেলা পরিষদ ভবন, পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জন, আনসার ও ভিডিপি কার্যালয়, মুখ্য মহানগর হাকিমের কার্যালয়, সিভিল ডিফেন্স ও ফায়ার সার্ভিস, টেলিযোগাযোগ অফিসসমূহ, খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ভবন, বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালত, বন ভবন, সুন্দরবন বিভাগের কার্যালয়, বাংলাদেশ বন শিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন অফিস, পোস্ট মাস্টার জেনারেল দক্ষিণাঞ্চলের কার্যালয়, কর বিভাগের অফিস, কাষ্টমস হাউস, রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরো অফিস, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা উপ পরিচালকের অফিসসহ বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অফিস, জেলা ও থানা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও জেলা শিক্ষা অফিস, পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের বিভিন্ন অফিস, ওষুধ প্রশাসনের অফিস, মৎস্য পশু খাদ্য, বিদ্যুৎ, পানি, দুর্নীতি দমন, মাদক নিয়ন্ত্রণ, কৃষি, শিপিং, তথ্য বিভাগ, যুব উন্নয়ন অধিদফতর, পাসপোর্ট অফিস, গণপূর্ত বিভাগ, ফ্যাসিলিটিজ বিভাগ, জনস্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন বিভাগের অফিস রয়েছে।

আরো আছে বিভিন্ন বীমা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, রেডিও স্টেশন, টেলিভিশন স্টেশন, স্টেডিয়াম, পোস্ট অফিস, বিভিন্ন শ্রেণীর হোটেল, ক্লিনিক, ক্লাব, কারাগার, সার্কিট হাউস, ডাক বাংলো, প্রেসক্লাব, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমী, শিক্ষক প্রশিক্ষণ মহাবিদ্যালয়, চেম্বার অব কমার্স, ষ্টীমার ঘাট, খেয়াঘাট, বিমান অফিস, নিউ মার্কেট, পার্ক, পাবলিক হল, বাস টার্মিনাল, রেল ষ্টেশন, শিশু একাডেমী, শিল্পকলা একাডেমী, সেনানিবাস, চিড়িয়াখানা, প্রেম কানন, পিকচার প্যালেস, শংখ, স্টার, উল্লাসিনী, সঙ্গীতা, সোসাইটি, ঝিনুক, বৈকালী, জনতা, মিনাক্ষী, চিত্রালী, লির্বাটি, সাগরিকা সিনেমা হলসহ বহু দর্শনীয় স্থান।

 

শিল্পকলকারখানা :

উন্নত সড়ক, নৌ ও রেল যোগাযোগের কারণে গত শতাব্দীর ৫০'এর দশকে খুলনায় একের পর এক শিল্প কলকারখানা গড়ে উঠতে থাকে। ১৯৫৪ সাল থেকে ১৯৭১ সালের মধ্যে মাত্র ১৭ বছরে দৌলতপুর জুট মিল্স লিঃ, প্লাটিনাম জুবিলী জুট মিল্স লিঃ, ষ্টার জুট মিল্স লিঃ, ক্রিসেন্ট জুট মিল্স লিঃ, পিপলস জুট মিল্স লিঃ, এ্যাজাক্স জুট মিল্স লিঃ, সোনালী জুট মিল্স লিঃ, মহসিন জুট মিল্স লিঃ, আলীম জুট মিল্স লিঃ, ইষ্টার্ণ জুট মিল্স লিঃ ও আফিল জুট মিল্স লিঃ, নিউজপ্রিন্ট মিল্স, হার্ডবোর্ড মিল্স, কেবল ফাক্টরি, টেক্সটাইল মিল্স, দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরি, শিপইয়ার্ড, ডকইয়ার্ড, জুট বেলিং প্রেসসহ সরকারি বেসরকারি বহু শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। এছাড়া স্বাধীনতার পর সাদা সোনা চিংড়ি ও সাধা মাছ চাষের ফলে খুলনাতে গড়ে উঠেছে অর্ধ শতাধিক মাছ কোম্পানি। এসব শিল্প কলকারখানায় হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। তবে গত শতকের ৮০'র দশকে সরকারের ভ্রান্তনীতির কারণে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো লোকসানের কবলে পড়তে থাকে। এক পর্যায়ে নিউজপ্রিন্ট মিল্স, দৌলতপুর জুটমিলসহ বেশ কয়েকটি ভারী শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। এতে খুলনার ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে আসে। তবে শিল্প নগরী খুলনা আবারো ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি জুটমিলসহ শিল্প প্রতিষ্ঠান। খুলনা শিপইয়ার্ড লোকসান কাটিয়ে উঠে এখন লাভ করছে। ইতিমধ্যে এখানকার তৈরি যুদ্ধ জাহাজ বাংলাদেশ নৌ বাহিনী ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়া জাহাজ রফতানির জন্য বিদেশের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে খুলনা শিপইয়ার্ড। এই শিল্প প্রতিষ্ঠানটি এখন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।

 

সিনেমা হল :

আকাশ সংস্কৃতির অবাধ প্রবেশ, নিমোনের চলচ্চিত্র নির্মাণ ও দর্শক হারানোর কারণে খুলনার ২০টি সিনেমা হলের মধ্যে ১১টিই বন্ধ হয়ে গেছে। আর যেসব হল চালু রয়েছে সেগুলো চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। সেই সঙ্গে বন্ধের তালিকায় রয়েছে বেশ কয়েকটি হল। বর্তমানে যেসব সিনেমা হল চালু রয়েছে সেগুলো হলো-শক্মখ, সংগীতা, সোসাইটি, পিকসার প্যালেস, ঝিঁনুক, চিত্রালী, লিবার্টী, গ্যারিসন এবং রূপসাগর।

সুন্দরবন : সুন্দরবন সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনভূমি হিসেবে অখন্ড বন যা বিশ্বে সর্ববৃহৎ। অববাহিকার সমুদ্রমুখী সীমানা এই বনভূমি গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের মোহনায় অবস্থিত এবং বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে বিস্তৃত। ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার জুড়ে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের ৬ হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার রয়েছে বাংলাদেশে। সুন্দরবন ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কোর ‘বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী' স্থান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।

সুন্দরবনের পুরোটাই যেন অজানা রূপ-রহস্য আর রোমাঞ্চে ভরা। বিশ্বের বৃহত্তম এই ম্যানগ্রোভ বনের বাসিন্দা ভয়ঙ্কর সুন্দর বেঙ্গল টাইগার কিংবা বিষধর সাপ শক্মখচূড়া। আরও আছে জলের বাসিন্দা কুমির, ডলফিন, হাঙ্গর, বিরল প্রজাতির কচ্ছপ ও পাখ-পাখালির দল। সুন্দরবনের শক্মখচূড়া পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বিষধর সাপ। এ সাপ ভারতের কেরালা থেকে শুরু করে মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া হয়ে ফিলিপাইন পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের ঘন জঙ্গলে দেখতে পাওয়া যায়। ওজনে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম পাইথন সুন্দরবনে পাওয়া যায়। তবে সংখ্যায় অত্যন্ত কম।কুমিরের ৩৬ প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে বড় ইন্দোপ্যাসিফিক খাঁড়ির কুমির। এ কুমিরের কিছু সুন্দরবনে এখনো বেঁচে আছে। এদের দু-একটি শিকারিদের এড়িয়ে এখনোটিকে আছে যেগুলোর আকার দুঃস্বপ্নে দেখা অতিকায় ডাইনোসরের মতো। সুন্দরবনের গাছের মধ্যে আছে সুন্দরী, গরান, ধুন্ধল, কেওড়া প্রভৃতি।

 

পুরাকীর্তি :

খুলনা জেলায় হিন্দু, বৌদ্ধ ও মুসলিম আমলের অনেক পুরাকীর্তি ছিল। কালের বিবর্তনে অনেক কীর্তি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। হিন্দু কীর্তির মধ্যে রয়েছে- নগরীর মহেশ্বরপাশার জোড়া মন্দির, যাতার দোল, পাইকগাছা উপজেলার কপিলেশ্বরী মন্দির, রূপসা উপজেলার পিঠাভোগ গ্রামে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পুত্র পুরুষের বাড়ি ও ফুলতলা উপজেলার দক্ষিণ ডিহি গ্রামে বিশ্বকবির শ্বশুর বাড়ি প্রভৃতি। কপিলমুনিতে এক সময় অনেক বৌদ্ধ আশ্রম ছিল। এখন তা আর নেই। মুসলিম পুরাকীর্তির মধ্যে আছে- কয়রা উপজেলার মসজিদ কুঁড়ের মসজিদ, বুড়ো খাঁ, ফতে খাঁর মাজার, মদীনাবাদের প্রাচীন কবর। ডুমুরিয়া উপজেলার আরস নগরের মসজিদ, মাগুরা ঘোনার ছালামত খাঁ মাজার, চিংড়ার মসজিদ। ফুলতলা উপজেলার মিছরী দেওয়ান শাহের মাজার, মুক্তেশ্বরী গ্রামের দীঘি, পাইকগাছা উপজেলার সরল খাঁর দীঘি। তাছাড়া খুলনা মহানগরীর পাশে রয়েছে বুড়ো মৌলভীর দর্গা। আরো আছে সুফি খাঁর গড়, খাজা ডাঙ্গার প্রাচীন কবর, মহারাজপুরের কীর্তি, শাকবাড়ের লবণের কারখানা, আলাইপুরের মসজিদ, গোরা ডাকাতের বাড়ি প্রভৃতি।

 

কিংবদন্তী :

খুলনা জেলার বিভিন্ন এলাকায় মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে আছে অনেক কিংবদন্তী। সংগৃহিত কিছুসংখ্যক কিংবদন্তির হচ্ছে- বনবিবি, ভূতের বাড়ি, গোরা ডাকাতের বাড়ি, নদীর নাম রূপসা, মিছরী দেওয়ান শাহ, চাঁদবিবি, সোনার কুমড়ো, গাজীর ঘুটো, দুধ পুকুর, কুদির বটতলা, শ্বেত পাথর, পীর ধরম চাঁদ, আলম শাহ ফকির, মহেশ্বরপাশার জোড় মন্দির, ল্যাটা ফকির প্রভৃতি।

পেশাভিত্তিক লোকজ সংস্কৃতি : কোন জাতির প্রাণ স্পন্দনকে ধারণ করে লোকজ সংস্কৃতি। আমাদের জাতীয় সত্তাকে ধারণ করেই লোকজ সংস্কৃতি বেড়ে ওঠেছে। প্রখ্যাত লোক বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড.ওয়াকিল আহমেদ বলেছেন, ‘দেশাচার, লোক প্রথা প্রচলিত বিধি ব্যবস্থা যা তা পূর্ব পুরুষের কাছ থেকে দেখে-শুনে লাভ করে, তাই লোক সংস্কৃতির সম্পদ। অর্থাৎ লোক সংস্কৃতি প্রধানতঃ ঐতিহাসিক। পৈতৃক সম্পতির মতো এগুলো বিনা দ্বিধায়, বিনা বিচারে গ্রহণ করেও পালন করে। গভীর অনুধ্যান ও অনুশীলন নেই বলে লোক ভাবনার দ্বারা নতুন উদ্ভাবন সম্ভব হয় না। লোক সংস্কৃতি স্থুলতা ও অশালীনতার কারণে এর নন্দনতত্তের আবেদন তেমন হৃদয়গ্রাহী হয় না। ব্যবহারিক প্রয়োজন, নিরপেক্ষ অভ্যাস ও আচারণ লোক সংস্কৃতিতে বৈচিত্র্য দেখা যায় না। লোক সংস্কৃতি মননশীল নয়। এতে স্বভাব ও প্রবৃত্তির ছাপ বেশী পড়ে। এজন্য লোকসংস্কৃতি অকৃত্রিম সরলতা ও স্বাভাবিকতা লোক সংস্কৃতির ভূষণ। জনসাধারণের অক্ষর জ্ঞান নেই বলে তারা কোন কিছু গ্রন্থবদ্ধ করে রাখে না। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাই লোক জ্ঞানের প্রধান উৎস। লোকমুখে তা প্রচালিত হয়, লোক শ্রুতিতে গৃহীত ও লোকস্মৃতিতে রক্ষিত হয়। এরূপ ক্ষেত্রে নৃতত্ত্ব, পুরাতত্ত্ব, ধর্মতত্ত্ব, সমাজতত্ত্ব, ভাষাতত্ত্ব, তথা জাতিতত্ত্বের প্রকৃত উপাদান লোক সংস্কৃতিতে প্রবাহমান থাকে। সুতারাং একটি দেশের একটি জাতির মৌলিকতা ও স্বকীয়তার পরিচয় তার লোক সংস্কৃতির দ্বারাই সম্ভব'।

লোকজ সংস্কৃতি লৌকক মানুষের ভাব ও রসের জীবন্ত উৎস। লোকজ সংস্কৃতির মাঝ দিয়ে লৌকিক মানুষের পিয়াসী হৃদয়ের দুর্বার আকুলি-বিকুলি নানাভাবে প্রচারিত হয়েছে। লোক সংস্কৃতিতে লোক জীবনের ভক্ত পবিত্র অধ্যায়ের ভাবগম্ভীর সংহত প্রকাশ লক্ষ্য করা যায়। বিচিত্র মনের বিচিত্র অনুভূতি অন্যান্য রূপ লাভ করেছে লোকজ সংস্কৃতির মধ্যে।

আমাদের দেশ গ্রামে গাথা। গ্রামই বাংলাদেশের জনজীবনের ও লোক সংস্কৃতির প্রাণ কোষ। গ্রামেই অধিকাংশ লোক বাস করে। তাই লোকসংস্কৃতি ও লোকজীবন নিয়ে পর্যালোচনা করতে হলে গ্রামকে অবশ্যই মূল্য দিতে হবে। আমাদের দেশে বৃত্তির দিক দিয়ে বিভিন্ন শ্রেণীর লোক আছে। এর মধ্যে কৃষিকাজে জড়িত লোকের সংখ্যা বেশী। কৃষিজীবী মানুষের পাশাপাশি অন্যান্য পেশাজীবীদের মধ্যে আছে- মাঝি-মাল্লা, জেলে, তাঁতী, কামার, কুমার, ছুতার, সেকরা, কাঁসারী, চুনারী, তেলী, মালী, ধোপা, গোয়ালা, ময়রা, কাহার, ঘরামী,টিুয়া, কাঠুরে, বারুই, বেদে, দর্জি, কবিরাজ, ওঁঝা, কসাই, নাপিত, ডোম, চামারসহ আরো অনেক পেশাজীবী মানুষ। এদের জীবনের বিভিন্ন দিক এক নয়। তাই এদের সাংস্কৃতিক জীবনও আলাদা। এর ফলে লোকজ সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে বিভিন্ন শ্রেণীতে সমৃদ্ধ হয়ে। আবার দেশের লোক সংস্কৃতি অঞ্চল ভিত্তিক আলাদা রূপ লক্ষ্য করা যায়। এদিক দিয়ে খুলনা জেলা সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ। অন্যান্য জেলার মত খুলনা জেলার লোকজ সংস্কৃতিতে বিভিন্ন ভাগ রয়েছে। তাই এ জেলার গ্রাম-গঞ্জের মানুষের জীবনকে কেন্দ্র করে পেশাভিত্তিক লোকজ সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে।

 

লোকজ সংস্কৃতিঃ

খুলনা জেলার পেশাভিত্তিক লোকজ সংস্কৃতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য পালকির গান, ওঝার গান, বাওয়ালীদের গান, গাছ কাটার গান, গাড়োয়ানের গান, জেলেদের গান, কবিরাজের গান, ঘোল তৈরীর গান, চুন তৈরীর গান, কুমারের গান, হাবু গান, ধান কাটার গান, ধুয়া গান ইত্যাদি। এছাড়া আছে তালের পাখা, শোলার খেলনা, বাঁশ ও বেতের পাত্র, মাটির পাত্র, পুতুল ও খেলনা, মাদুর, কাঠের খেলনা ইত্যাদি তৈরি কাজে নিয়োজিত পেশার মানুষের দ্বারা গড়ে ওঠা লোকজ সংস্কৃতি। পালকির গান : সুপ্রাচীন কাল থেকেই গ্রাম বাংলায় পালকির প্রচলন ছিল। পালকির ব্যবহার সমগ্র বাংলাদেশ জুড়ে ছিল। জমিদারদের আট বেহারা/ষোল বেহারায় পালকী এখন অতীত হয়ে আছে। কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন হলে পালকীই ছিল অন্যতম প্রধান বাহন। বিয়ে-সাদীতে পালকী না হলে বিয়ের আমেজই পাওয়া যেতো না। পালকীর জন্যে অশনি সংকেত হয়ে এলো যান্ত্রিক যান এবং অন্যান্য বিকল্প বাহন। যান্ত্রিক যানের ব্যবহার যতো বাড়তে লাগলো, পালকীর সুসময় ততো নাগালের বাইরে যেতে লাগলো। কোথাও কোথাও পালকীর ব্যবহার থাকলেও তা সীমিত। পাইকগাছা (খুলনা) থেকে পালকী বওয়ার কিছু গান ‘নোরাড' প্রকল্পাধীন ভিডিও'তে ধারণ করা হয়েছে। পালকী শব্দের অর্থ-মনুষ্যবাহিত যান বা শিবিকা বা ডুলি। আর কাহার শব্দের অর্থ-পালকী বাহক বা বেহারা। কাহার একটি হিন্দি শব্দ। বিয়ের, পর নতুন বর ও বধূকে কাহাররা পালকীতে বহন করে নিয়ে যাবার সময় পথে যে গান গায় তাকে সরকার বলেছেন, ‘পালকির গানে বিশেষ করে বিয়েতে যে গান গাওয়া হয় তাতে বর আগমনের বরের চিত্তের অবস্থা প্রকাশিত হয় এবং কন্যা বিদায় একটি দুঃখ ভারাক্রান্ত আকুতি ধ্বনিত হয়। পালকির গান দ্রত লয়ের এবং তাল প্রধান। কোন বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার হয় না, বাহকের ভর সামলানো লাঠির আঘাতে তাল রক্ষা করা হয়। পালকির গানে একদিকে যেমন বিষয়বস্তু বর্ণনা করা হয়, অপরদিকে এখানে নাটকীয় অভিব্যক্তিও প্রকাশিত হয় গায়কের আবেগ এবং গতি ছন্দে। নগরায়নের ফলে পালকি আজ জাদুঘরে আশ্রয়ী হতে চলেছে। বাহকেরা পেশা পরির্বতন করতে বাধ্য হয়েছে। পালকির গান লোক সংস্কৃতির এ আঙ্গিক লুপ্ত হবার জন্য অপেক্ষা মাত্র।

অপরদিকে অধ্যাপক মুহাম্মদ আবু তালিব খুলনা জেলার পালকির গান সম্পর্কে বলেছেন, ‘পালকির গান-পালকী বাহকের গান নয়; সে গান হলো বাঙালী সমাজ জীবনের গান। তার সাথে জড়িয়ে রয়েছে-বাঙালী সমাজের সুখ-দুঃখের কত না কাহিনী'।

কাহাররা বর ও কনেকে নিয়ে যাবার সময় পথে যে গান গায় তার একটি খুলনার রূপসা উপজেলার শ্রীফলতলা গ্রাম থেকে সংগৃহিত হয়েছে। এ গানে আছে - ‘শোন নলীতে সখী/আরে ও প্রাণের মাধব যায় না ছেড়ে,/ মাধব মাধব বলে ওরে মাধব অন্তর উঠিলে জ্বলে।/আরে ও নলীতে সখী / আরে ও প্রাণের মাধব যায় না ছেড়ে।/মাধব যদি আমার হতো/মাধব যাবার ব্যালয় বলে যেতো,আরে ও মাধব অন্তর উঠিল জ্বলে।/শোন নলীতে সখী/আরেও প্রাণের মাধব যায় না ছেড়ে।/দোপ কাপড়ে কালির ফুটো/ ওরে মাধব যাবে যৌবন রবে খোটা।/ আরে ও নলীতে সখী/ আরে ও প্রাণের মাধব যায় না ছেড়ে/নারীর যৌবনে তামা কাসা/ আরে মাধব যে সেই করে আশা/ আরে ও নলীতে সখী/ আরে ও প্রাণের মাধব যায় না ছেড়ে'। খুলনা জেলার আর একটি পালকি গানে কন্যা বিদায়ের ক্ষণটি বিশেষভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। গানটি হলো : ‘আরে ওরে অমেলা সুন্দরী/ওঠে চলে যায় দেশে।/হাতের পাতের খায়ইয়ে অমেলা/ মানুষ করলাম তোরে।/ আর কতোদিন থাকপা অমেলা/ মা বাপরো ঘরে।/তখন কান্দিতে লাগল অমেলা/ কইতে লাগিল/ কত টাকা পাইয়ে বাপজান / অমেলারে খাইলে বেচে/ টাকা লইনি কড়ি লইনি/ মাজান শুধুই মুখের বাণী/তখন কান্দে ওরে অমেলা/ মায়ের গুলা ধরে/ আর কেন্দোনা অমেলা/কইয়ে বুঝাই তোরে /তারায় করে ঝিঁকির মিকির চাঁদে আলো করে'। কাহাররা বর কনেকে পালকীতে নিয়ে পথে গান গেয়ে বরের গ্রামে প্রবেশ করে। গ্রামে বরের অনেক আত্মীয়-স্বজন থাকে। তখন তারা আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি বাড়ি গিয়ে উঠোনের ওপর পালকীতে বর কনেকে নিয়ে গান গায়। আত্মীয়-স্বজন কাহারদের নগদ টাকা বা পিতলের কলসী বা কাসার থালা বাটি উপহার দেয়। এক সময় খুলনা জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে কাহাররা ঘর ভাড়া করে থাকতো। বিয়ে উপলক্ষে তাদেরকে বায়না দিয়ে আনা হতো। আবার খুলনা জেলার অনেক স্থানে কাহারদের স্থায়ীভাবে বসবাস ছিল। তবে এখন তারা এ পেশার সাথে জড়িত নেই। পালকির প্রচলন আজ প্রায় হারিয়ে গেছে। সে সাথে পালকির গানও বিলুপ্ত হতে চলেছে।

সাপুড়ের গান : বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় সাপুড়ে আছে। এরা বন জঙ্গল ও ঘর-বাড়ীতে গর্তের মধ্যে লুকিয়ে থাকা গোখরো সাপ ধরে থাকে। এ সাপ তারা ঝাঁপিতে রেখে দেয়। তারপর সাপের বিষ ফেলে দিয়ে, গ্রাম-গঞ্জে খেলা দেখিয়ে টাকা-পয়সা উপার্জন করে। আবার অনেক সময় লোকজন দু'জন সাপুড়েকে বায়না দিয়ে আনতো। প্রতিযোগিতা হতো তাদের মধ্যে সাপ খেলা নিয়ে। এ সময় সাপুড়েরা অনেক সাপ এক সাথে ছেড়ে দিয়ে খেলা দেখাতো। যে বেশী সাপ ছেড়ে খেলা দেখাতো তাকে বিজয়ী বলে ঘোষণা করা হতো। এ সাপ খেলা দেখানোর সময় সাপুড়েরা গান গেয়ে থাকে। গানের সাথে ঢোল, বাঁশি, খোল, জুড়ি, বেহালা ও হারমোনিয়াম ব্যবহার করা হয়। এরা যে গান গায় তা মূলত ভাসান গান। এ ভাসান গান পালা করে লোকে গেয়ে থাকে। খুলনা জেলায় এক সময় অনেক সাপুড়ে বাস করতো। এখনোও কোন কোন স্থানে দু'একজন সাপুড়ে দেখা যায়।

খুলনা অঞ্চলের সাপুড়েরা সাপ খেলা দেখানোর সময় যে ভাসান গান গায় তা এ রকম -‘আমি কোন দেশে যাব ও যাবরে (ধুয়া) সকল বান্ধব হাহাকার করে।/চারিজনে ধরিয়া লখাইরে ঘরের বাহিরে করে।/দীর্ঘভূজ লক্ষীন্দর দীঘল মাথার চুল।/জ্ঞাতি সবে লয়ে গেলো গাঙ্গরীর কুল।/পরম সুন্দর হয় চান্দর নন্দন।/দিব্যবস্ত্র পরাইল দিব্য আভারণ/আঁচলে বান্দিয়া দিলো বহু মূল্যধণ।/যাইওনা যাইওনা লখাই এইখানে রও।/আগে তোমার মায় মরুক পাছে তুমি যাও।/সোনা বলে বধূ তুমি আমার কথা রাখ/লখাইর বদলে তুমি মা বলিয়া ডাক/চারিভিতে বন্ধু সব কান্দে উচ্চস্বরে/জ্ঞাতি সবে ধরে নিলো ভুরের উপরে।/মাজুসে শোয়াইল লখাই উত্তর শিয়ারী।/নিকটে দাঁড়াইল লখাই সাহেব কুমারী/হস্তজোড় করিয়া বেহুলা হইলো আগুসার/সবার চরণে বেহুলা করে নমস্কার'। ছাদ পেটানোর গান : বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ছাদ পেটানোর গানের প্রচলন ছিল। সে সাথে খুলনা জেলায়ও ছাদ পেটানোর গানের প্রচলন ছিল। ছাদ পেটানোর গান আজ বিলুপ্তির পথে। অধ্যাপক সুশান্ত সরকার বলেছেন, ‘অর্থবান বা ধনী ব্যক্তির বাড়িতে অট্টালিকা তৈরি হলে তার ছাদ চুন-সুরকি দিয়ে ভাল করে পিটিয়ে জমাট করা হতো। এই ছাদ পিটাতে গিয়ে শ্রমিকরা অবেচতনে আবহমান লোক সংস্কৃতির একটি ঐশ্বর্যপূর্ণ ধারাকে বহন করে নিয়ে চলতেন। ছাদ পেটাতে গিয়ে একইতালে যাতে আঘাত পড়ে, সেজন্যে তাল প্রধান করে একজন সমবেত কণ্ঠে সেই গানকে গাইতেন। আর তালে তালে ছাদ পিটিয়ে যেতেন। ছাদ পেটানোর গানের বিষয় বিচিত্র হতো সুখ-দুঃখ, হাসি ঠাট্টা, তামাশা ও স্থান পেতো শ্রমকে সহজ করার জন্য। কোন কোন সময় শ্রমিকরা সংক্ষিপ্ত ছাদ পেটানোর গান গেয়ে থাকে। প্রখ্যাত লোক বিজ্ঞানী ড. আশরাফ সিদ্দিকী বলেন, ‘অনেক সময় এতে ইতিহাসের টুকরো খবরও পাওয়া যেত'।

খুলনা জেলার নৈহাটি গ্রাম থেকে সংগৃহিত একটি ছাদ পেটানোর গানে আছে- ‘গাঙের ঘাটে কদমতলে বাজালো বাঁশি/রাধা বলে নিকুঞ্জ কাননে/আমায় বলে বলুক লোকে মন্দ/অন্তরে ভুলি নাই তারে/প্রাণ দিয়েছি যারে।/কালার পদে প্রাণ সুপিলাম/যা থাকে কুপালে।/যাসলে তোরা লবণচুরায়/পুড়বি যাইরে লবণচুরায়/দ্যাকো হবে না আর সখীর সাথে।/কালার পদে প্রাণ সপিলাম/যা থাকে কুপালে /আমায় বলে বলুক লোকে মন্দ/অন্তরে ভুলি নাই তারে/প্রাণ দিয়েছিল যারে।/আগে যদি জানতাম বাঁশি/ধরতাম তুমার গুলায়।/ন বুঝিয়ে ধরলে বাঁশি/বাঁশি বাজতো রাধে বলে/কালার পদে প্রাণ সুপিলাম,/যা তাকে কুপালে/নলীতে সখি তুমারে/প্রাণ দিয়েছি যারে'। ওঝার গান : ওঝা শব্দের অর্থ সাপের চিকিৎসক। খুলনায় আছে সুন্দরবন। সুন্দরবনে বাস করে নানা প্রজাতির বিষধর সাপ। এ সাপের দংশনে প্রতি বছর অনেক জেলে-বাওয়ালী মারা যায়। এছাড়া খুলনা অঞ্চলে এক সময় বিষধর সাপের উপদ্রব ছিল। আজও খুলনার বন- জঙ্গলে বিষধর সাপ আছে। কাউকে যদি সাপে দংশন করে তার বিষ নামানোর জন্য ওঝা আছে। গ্রামের মানুষের বিশ্বাস সাপে দংশন করার পর যদি ওঝা এসে হাজির হয় তাহলে সাপে দংশন করা ব্যক্তি মারা যাবে না। আজকের দিনে সাপের দংশনে আক্রান্ত ব্যক্তিকে ওষুধ বা ইনজেকশন দিয়ে সুস্থ করে তোলা হলেও এখনো খুলনার বিভিন্ন স্থানে ওঝা দেখা যায়। ওঝারা যে মন্ত্র দিয়ে বিষ নামায় তা অনেকটা ছড়া গানের মতো। বিষ নামানোর সময় বিভিন্ন পর্যায়ে মন্ত্র বা ছড়া গান গেয়ে থাকে। মীর আমীর আলী বলেছেন, পাইকগাছা নিবাসী সাতক্ষীরার এক স্কুল মাস্টার এবং সাপের ওঝা কালিপদ বাবু নাকি কামরূপ-কামাক্ষার কোন এক গুরুর কাছ থেকে মন্ত্র শিখেছেন। তার বিশ্বাস এ মন্ত্র অপাত্রে গেলে যেমন মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে, তেমনি ঐ মন্ত্রের গুণাবলী বিনষ্টের সম্ভাবনাও থাকে। আর এ কারণেই তিনি অতি আপনজন ছাড়া কাউকে মন্ত্র শিখান না।

কথাটি অনেকাংশে সত্য। তার ফলেই খুলনা জেলার ওঝাদের মন্ত্র বা ছড়া গান খুব বেশি সংগৃহিত হয়নি। কোন ব্যক্তিকে সাপে দংশন করলে ওঝা বিষ বন্ধন মন্ত্র বা ছড়া গান গেয়ে নিজের কাপড়ে গেরো দেয়। তখন সাপের বিষ আর ওপরে ওঠতে পারে না। তাদের মন্ত্র বা ছড়া গানটি হলো- ‘ধোপানীর ঘাটে কাপড় কাচে/পদ্মা পাতায় বিষ ভাসে,/নেতা ধোপানী গুরু আমার/মুই যে তোর শিষ্য হই/আঁচলে বাঁধিয়া উস্কায় অঙ্গ বিষ/মুই যে দাঁড়িয়ে রই।/বিষ বিষ ওরে বিষ /বাঁধিলাম মনসার বরে,/তিন মাস তুই বিষ ওরে/থাক এই খুঁটির ভিতরে /গরুড় ওই পাহাড় থাকিয়া/নীচের পানে চায় থাকিয়া/হাঁটুর ওপরে বিষ না যাস/অনন্ত বাসুকীর মাথা খাস/কার আজ্ঞে?/মা মনসার আজ্ঞে'।

সাপের দংশন স্থানে বেঁধে, রোগীর সামনে বসেও সর্প দংশনের খবর শুনে ওঝা মন্ত্র বা ছড়া গান গেয়ে থাকে। আবার সাপের বিষ নামানোর এমন কিছু মন্ত্র বা ছড়া গান আছে যা অশ্রাব্য ও অশ্লীল। ওঝার এ গানে অনেক অশুদ্ধ ও দুর্বোধ্য শব্দ আছে যার অর্থ বের করা কঠিন। বাওয়ালিদের গান : খুলনা জেলার অনেক অংশ জুড়ে রয়েছে সুন্দরবন। যেসব দরিদ্র লোক সুন্দরবনে গিয়ে গোলপাতা ও গাছপালা কেটে থাকে তাদেরকে বাওয়ালী বলে। বর্তমানে সুন্দরবনে গাছপালা কাটা নিষিদ্ধ। তাই বাওয়ালীদের তৎপরতাও নেই। ঐতিহাসিক এএফএম আব্দুল জলিল বলেছেন, ‘প্রাচীন কাল হইতে সুন্দরবনে কাঠুরিয়া, মৌয়াল, প্রভৃতি শ্রেণীর লোকেরা সুন্দরবনের হিংস্র জন্তুর আক্রমণ হইতে রক্ষা পাওয়ার জন্য ওঝা, গুণীন-বাউলেদের সঙ্গে রাখার প্রচলন ছিল। বাউলে শব্দের অর্থ ওঝা। ঝাড়-ফুঁক, মন্ত্রতন্ত্র পাঠ তাদের কাজ। এই বাউলে শব্দ বাওয়ালী নামের উৎপত্তি হইয়াছে। কাঠ সংগ্রহকারী কাঠুরিয়া ও গোলপাতা সংগ্রহকারীকে ক্রমান্বয়ে বাওয়ালী নামে অভিহিত করা হয়। বাউলে শব্দের অপভ্রংশই বাওয়ালী'। বাওয়ালী তাদের কাজে উদ্দীপনার জন্য গান গেয়ে থাকে। যেমন বড় গাছ কেটে অন্য জায়গা নেবার সময়, উজানে নৌকা বেয়ে যাবার সময় ও গাছ কাটার সময় তারা গান গায়। বাওয়ালীদের একটি গানে আছে- ‘ওরে হাই ছি ছি/সুন্দরী বন/যা দেখিলে জুড়ায় মন।/মন জুড়ায় না/জুড়ায় হিয়ে সোনার লাটন,/কাঠেরটিয়ে,/দাঁত বান্দাবো/হুগলী যেয়ে/বেগট ঘুর ঘুর/কোথায় ডাকে/নিত্যি স্যাটা/স্বপনে দেখে।/পাট পাটাল্লা/বুরুজ বাংলা/বাংলা বিবি/বাইরি আয়।/মদ্দির বাতাস/গায় লাগিয়ে/ছেলে হয়।/ছেলে পিলে/ভাত না পাইয়ে/না ভাতির ন্যাওড়া/কবাস গাদে'। অন্য আরেকটি গান আছে এই রকম- ‘এই আল্লারী নাম/বাজেরে কালাম/কালামের ধ্বনি/মরুখ্যের চেনী।/পানিকে চুনি/আমরা ক্যান শুনি/গাজীকে গাজী/গাজীকে পাজী/গায় বলে রে/কাঠ টানরে'। গাছ কাটার গান : খুলনা জেলার উত্তরাঞ্চলে এক সময় প্রচুর খেজুর ও তালগাছ ছিল। এখানে ওই অঞ্চলে তাল ও খেজুর গাছ আছে। শীতকালে খেজুর ও তালগাছ কেটে রস বের করে গুড় বানানো হয়। এই গাছ যারা কাটে তাদেরকে গাছি বলা হয়। গাছিরা মনের আনন্দে গাছ কাটার সময় গান গেয়ে থাকে। এ রকম একটি গান -‘কোন দেশের গাছিরে ভাই,/গাছ কাটতে বাংলায় আলি।/সারা গাছে না'চে না'চে/ধরা পোচ দিলে।/পোচের ছোটে প্রাণ কেঁপে ওঠে/শেষ কালে ঘর করছি তার কপালি'। গাড়োয়ানের গান : যারা গাড়ি চালায় তাদেরকে গাড়োয়ান বলে। খুলনা জেলার বিভিন্ন এলাকায় এক সময় গরুর গাড়ির প্রচলন ছিল। আজও কোন কোন স্থানে গরুর গাড়ির প্রচলন রয়েছে। আবার মহিষ দিয়েও গাড়ি চালানো হয়। তাকে মহিষের গাড়ি বলে। গাড়িতে করে মালামাল আনা নেয়া করা হয়। মাল বোঝাই গাড়ি নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে গাড়োয়ানের পরিশ্রমের প্রতি অমনোযোগী হবার জন্য গাড়ি ঠেলতে ঠেলতে গান ধরে।

খুলনা মহানগরীর দৌলতপুর এলাকা থেকে সংগৃহিত একটি গাড়োয়ানের গান - ‘এই চান সুন্দরী মারো ঠ্যালা/এই রূপ সুন্দরী ডুবুক ব্যালা।/তোরে নিয়ে করব খ্যালা/চক বাজারে যাইয়ে।/এইতো আলাম বাড়ীর কাছে/এইতো গিলাম গাড়ির পাছে/চান সুন্দরী আসে গেছে/ঠ্যালা মারো গান গা'য়ে।/ওই গ্যালো ওই গ্যালো/চান সুন্দরী পলায় গেলো/জোরসে মারো ঠ্যালা/গাড়ির পাছে যাইরে'। জেলেদের গান : খুলনা জেলায় জালের মত নদী বয়ে গেছে। তাছাড়া সুন্দরবনের মধ্যে আছে অনেক নদী-খাল। এছাড়া আছে অনেক বিল ও বাওড়। এসব নদী নালা, বিল-বাওড়ে আছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। অপরদিকে বঙ্গোপসাগরে আছে প্রচুর মাছ। এসব মাছ ধরে যারা বিক্রি করে তাদেরকে জেলে বা মৎস্যজীবী বলা হয়। এ জেলেরা সাধারণতঃ হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক। নদী-নালা, খাল-বিল, বাওড় ও সাগর থেকে মাছ ধরার সময় মনের আনন্দে জেলেরা গান গেয়ে থাকে। জেলার শ্রীরামপুর গ্রাম থেকে সংগৃহিত জেলেদের একটি গান- ‘পরের চাকরি যে জন করে/সে শ্যালা ক্যানো বিয়ে করে?/কলকাতায় পাঠালাম চিঠি/ও গুণের ননদলো-/তুমার ভাই ক্যানো বিদেশেথ্বে আ'লো না।/কাতল মাছের পাতল চামড়া/রুই মাছের ঝোল/তারি চাইতে অধিক ভালো/যুব নারীর কোল রে/ও গুণের ননোদলো/তুমার ভাই ক্যানো বিদেশেথ্ব আ'লো না'। মাঝির গান : নদী আর নৌকাকে নিয়ে যারা জীবিকা নির্বাহ করে থাকে তারা মাঝি নামে পরিচিত। এ জেলায় অনেক মাঝি আছে। জীবন-জীবিকার জন্য নৌকা নিয়ে তারা এক ঘাট থেকে অন্য ঘাটে যায়। এসময় তারা গান গেয়ে থাকে। পাইকগাছা উপজেলার লক্ষ্মীখোলা গ্রাম থেকে সংগৃহিত একটি মাঝির গানে বলা হয়েছে- ‘দোস্তের বাড়ি যাইতে গ্যালে পথে হলো বাধা/ও হারে মাঝি শুনে যাও।/মাঝির হাত শুনার বরণ মাঝি আমায় করো দান।/নতুন গাঙে নতুন পানি ফেরে বাঁকে বাঁকে/মাঝি নুক নাইরে/ছোট খাটো মাঝি তুমার মুখে চাপা দাঁড়ি/মাঝি শুনে যাও/তুমার হাতের সোনার আংটি মাঝি আমায় কর দান।/নতুন গাঙে সামনের বাঁকে, মাঝি আমার বন্ধু থাকে/ও হারে মাঝি শুনে যাও'। কবিরাজের গান : খুলনা জেলায় কবিরাজ আছে। এরা বিভিন্ন গাছ-গাছড়া নিয়ে ওষুধ তৈরিকালে গান গেয়ে থাকে। খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার থুকড়া গ্রাম থেকে সংগৃহিত একটি কবিরাজের গানে আছে- ‘শংক রাজের-পাকা পাতা/হত্তিকের তিতে/যৎযাবৎ রোগ শোকের/ছিল পরানের মিতে।/পাথর কুচির পাতা বাটা/জয়তুনের ছাল ঘাটা/আয়রে আয় রোগী নাটা।/কোবরেজ বাড়িতে সীতে/যৎযাবৎ রোগ শোকের;/ছিলো পরানের মিতে'। ঘোল তৈরির গান : খুলনা জেলার অনেক গ্রামে ঘোষদের বসবাস আছে। তারা দধি,ঘোল ও ঘি এবং ছানা তৈরি করে গ্রামে বিক্রি করে বেড়ায়। রাতে ঘোল তৈরির সময় বা ঘোল ফেরি করে বেড়ানোর সময় ঘোষালরা গান গেয়ে থাকে। ঘোল তৈরীর একটি গানে আছে - ‘আমার ঘোলের নাম ময়না/ঘোল খালি কিছু হয় না/ঘোল টানিছ ব্যান নাত্তিরি/মালকুচা দিয়ে।/ঘোল বানায়ছি সর্বশ্রেষ্ঠ/ঘোষ গুরুর নাম নিয়ে।/আমার ঘোল খালি সব।/বাবার নাম ভুলে যাবা,/পাতায় থাবা দিয়ে'। চুন তৈরির গান : খুলনা জেলায় অনেক চুন তৈরী পেশার মানুষ আছে। এদেরকে চুনারী বলে। তারা নদী-নালা ও খাল বিল থেকে শামুক ও ঝিনুক সংগ্রহ করে তা আগুনে পুড়িয়ে চুন তৈরি করে থাকে।

চুন তৈরি কালে অনেক চুনারী এ রকমভাবে গান গায়- ‘গয়ায় বদল কাশী গ্যালাম/এ্যাকগাদা ঝিঁনুক পালাম।/ঝিঁনুকির বদল ছাই পালাম,/ছাই নিয়ে হাটে গ্যালাম।/হাটের ছাই কাদা কাদা,/দেখতি নাকে সাদা সাদা/কাশীর বড় গুণ/সেগুলির চাইয়ে আমার বাড়ি/ভালো পানে খাওয়া চুন'। কুমারের গান : কুম্ভকারদের কুমার বলে। খুলনা জেলায় বিভিন্ন স্থানে কুমারদের বসবাস আছে। এরা মাটি দিয়ে নানা ধরনের মাটির পাত্র তৈরি করে থাকে। আজকের দিনে মাটির পাত্র তৈরী করে থাকে। আজকের দিনে মাটির পাত্রের স্থান দখল করেছে বিভিন্ন ধাতব ও প্লাষ্টিক পাত্র। তবু খুলনার বিভিন্ন স্থানে কুমাররা অনেক কষ্টে এ পেশার সাথে জড়িত রয়েছে। তারা মাটির বিভিন্ন পাত্র তৈরী করার সময় গান গেয়ে থাকে।

কুমারদের একটি গানে আছে- ‘মাটির জমমো মাটির জমমো;/মাটির চাকায় মাটি ঘোরে/মাটি দ্যায়া না যায়। ঘোরে মা কালী ঘোরে/শিব ঘোরে শম্ভু ঘোরে/সীতা ঘোরে রাধা ঘোরে/ও চাকা না ঘুরে নেই কোন উপায়।/বারো মাসে বারো পূজো/শিব রাত্তির শিব পূজো/মা কালীর দুগগো পূজো/সকল পূজো দেব আমি/পূজো দিয়ে মা কালীর আশীবার্দ নেবো।/পুন্য স্নান জাতে অম্লান/বংশ উজ্জ্বল মাটির কমমো/ঘোর ঘোররে মাটির চাকা/ওরে ঘোররে চাকা সদর'। হাবু গান : খুলনা জেলায় হাবু গানের প্রচলন আছে। এ গান সাধারণত বেদের গেয়ে থাকে। এই বেদেরা নৌকায় জীবিকার জন্য এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যায়। নদীর ধারে ছাউনী ফেলে ছড়িয়ে পড়ে গ্রামে। বেদেরা সাপ খেলা দেখায়, নানা ধরনের ওষুধ বিক্রি করে, সিংগা লাগিয়ে বাত রস তোলে। খদ্দের জোগাড় করার জন্য তারা পথের পাশে বা কোন বাড়ির উঠানে হাতের লাঠিতে তাল দিয়ে নেচে নেচে গান গায়। এ গানকে হাবু গান বলে। লোক সংস্কৃতির বিচারে হাবু গান একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। হাবু গান আজ বিলুপ্তির পথে। একটি হাবু গান- ‘রাম গেল বনবাসে বেউলা হইল রাঢ়ী/তার শোকে কান্দেরে মোন কোদালের আছাড়ী/ধুয়াঃ আরে নাগর আলী কুম কুম/সাগর আলী কুম কুম/চাক্কুম চক্কুম/এ্যানাখান ত্যানাখান।/রাঢ়ী বুড়ির চুল নাইরে, চুলের লাগি কান্দে/কচুর পাতায় টোপলা দিয়ে ডাঙ্গর খোপলা বাঁধে।/ধুয়াঃ আরে কুম নাগর আলী কুম কুম/সাগর আলী কুম কুম/চাক্কুম চক্কুম/এ্যানাখান ত্যানাখান'। ধান কাটার গান : খুলনা জেলায় প্রচুর ধান উৎপাদন হয়। ধান উৎপাদন করতে কৃষকদের প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়। কিন্তু যখন ক্ষেতে সোনার ধান পেকে ওঠে তখন কৃষকের মনে আনন্দের বান ডেকে যায়। পাকা ধান কাটার সময় কৃষকের কন্ঠে যে গানে সুর হয়ে ওঠে তাকে ধান কাটার গান বলে। ধান কাটার একটি গান-‘বাড়ির কাছে কামার ভাইরে/মাও ঝি বানায় পান/ভালো করে গুড়াইয়ে দিও কাচি/দা-য়ালে কাটবো সুনার ধান।/ওরে বিদেশের দায়ালে/আমার ধান কাটে ক্যামন গুছা গুছা।/এ্যামন ইচ্ছে ধরে আমার/দা-য়ালের পুরাই সেই ধানের ও মালা।/বাড়ীর কাছে মিস্ত্রী ভাইরে,/খাওরে বাটার পান/ভালো করে কি দা-য়াল/কাটবো সুনার ধান।/দা-য়াল আমার নাংগোল চষে/য্যানো কিরে আতোর/এ্যামন ইচ্ছে ধরে আমার/গলায় পুরাই ধানের আজর/দাড়ারে বিদেশের নাগর।/ওরে দা-য়ালরে/আমার দা-য়াল মাছ মারে/চান্দা চুচড়ো পুটি/আমার দা-য়াল মারে রুই কাতলা রে/এ্যামন ইচ্ছে ধরেরে/যাইয়ে খারুই ধরি।/বিদেশের নাগরের সাথেরে'। ধুয়া গান : ধুয়া গান এক ধরনের পল্লীগীতি। রচয়িতা ও গায়েনরা সবাই নিরক্ষর। আব্দুর রশীদ বলেছেন, ‘‘নিরক্ষর মুসলমান, বিশেষ করে নৌকার মাঝি-মাল্লা ও ক্ষেত খামারের চাষী মজুররাই ছিল ধুয়া গানের ধারা বাহক। বিগত (ঊনবিংশ) শতাব্দির শেষ ভাগ থেকে বর্তমান (বিংশ) শতাব্দির প্রথম দশক পর্যন্ত মালবাহী বড় বড় নৌকা দূর হতে দূরান্তর যাতায়াত করতো। এসব নৌকায় দশ থেকে পনর জন মাঝিমাল্লা থাকতো। ফরিদপুর জেলার দক্ষিণ-পূর্বভাগে এবং বরিশাল ও খুলনা জেলার নদীতে মানুষ চালিত এসব নৌকার যাতায়াত নির্ভর করতো জোয়ার উপর। ভাটা বা জোয়ারের আগমনের অপেক্ষায় বন্দরের ঘাটে নোঙর ফেলে বসে থাকতো পণ্যবাহী বড় বড় নৌকা। মাল্লাদের অলস অবস্থা আর কাটে না। কেহ কেহ সমস্বরে গান ধরে। এরা যে গান গায় তাকে ধুয়া গান বলে। এক নৌকার মাঝিদের সাথে অন্য নৌকার মাঝিদের ধুয়া গানের পাল্লা হয়। ক্ষেতের আমন ধান কাটার সময় কৃষকরা ধুয়া গান গেয়ে থাকে। ধুয়া গানের কয়েকটি শ্রেণী আছে। যেমন বন্দনা, খোশনামী, ঘর, তরী, মারফতি, বিরহ, হিন্দুয়ানী ও ইমামপুরী ইত্যাদি। এ জেলার প্রচলিত একটি ধুয়া গান- ‘দিন তোলরে খোদার বান্দা/বইয়া ভাবলে হবে কি/কোনদিন জানি আসবে সমন/লয়ে সদরের চিঠি।/ওরে আসবে সমন করবে দমন/দুই হস্তে লাগায়ে প্রেমডুবি/কোথায় রবে দয়াল বাপ-মা/কোথায় রবে ঘরবাড়ি।/মইরা গেলে আল্লার বান্দা/গোর কিনারে লইয়া যায়/দশজন আইসে মঞ্জিল দিয়ে/গোরের মধ্যে রাইখ্যা দেয়/বুধ বিসুৎ শুক্র শনি রবি সোম/আর মঙ্গলবার/এই সাতদিনের কোনদিন ভাল/লেখছে মালিক পরোয়ার?/আইজ ভালো কাইল ভালো/খোদার দিনতো মন্দ নয়/আপনার করম গো দোষে/দিনের কথা মন্দ কয়'। আজ আর খুলনা জেলার ধুয়া গানের তেমন কোন কদর নেই। এগুলো বিলুপ্ত হতে চলেছে। খুলনা জেলার পেশাভিত্তিক যে সব লোকজন গানের কথা উল্লেখ করা হলো, এগুলোই শেষ নয়। আরো পেশাভিত্তিক অনেক লোকজ গান আছে। সবগুলো গানের কথা এ স্বল্প পরিসরে তুলে ধরা সম্ভব নয়। আবার অনেক এ ধরণের গান বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তা খুঁজে পাওয়া মুসকিল। ফলে খুলনা জেলার পেশাভিত্তিক উল্লেখযোগ্য গানের সংক্ষিপ্ত কথা তুলে ধরা হয়েছে।

খুলনা জেলায় পেশাভিত্তিক লোকজ শিল্পী রয়েছে। এরা তালের পাখা, শোলার খেলনা, বাঁশ ও বেতের পাত্র, মাটির পাত্র, পুতুল ও খেলনা, মাদুর, কাঠের খেলনা ইত্যাদি তৈরি করে থাকে। এগুলো আবার নানা নকশায় শোভিত করে তোলা হয়। এর প্রেক্ষাপটে ফুটে ওঠে। পেশা ভিত্তিক লোকজ সংস্কৃতির চমৎকার রূপ। নানা কারণে আজকের দিনে খুলনা জেলায় পেশাভিত্তিক লোকজ শিল্পীরা পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। সে সাথে বিলুপ্ত হতে যাচ্ছে এসব সংস্কৃতি।

আমি আমার এ প্রবন্ধে আলোচ্য বিষয়ের ওপর তেমন কোন পর্যালোচনা ও গবেষণা ভিত্তিক দিক নির্ণয় করিনি। আমি শুধু খুলনা জেলার পেশা ভিত্তিক লোকজ সংস্কৃতির উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বিষয়ের চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। একটু বিশ্লেষণ করে সহজেই বোঝা যাবে যে, খুলনা জেলার এ পেশাভিত্তিক লোকজ সংস্কৃতি আজ বিলুপ্তির পথে। শুধু খুলনা জেলার জন্য নয়, দেশ ও জাতির জন্য এ লোকজ সংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখতে হবে। এ ব্যাপারে লোকজ সংস্কৃতি গবেষক, সংগ্রহ ও সংরক্ষণকারী ব্যক্তি ও সংস্থা এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে সামনে রেখে আরো গবেষণা হবে বলে সকলের প্রত্যাশা।

বিনোদন স্পট ও প্রসিদ্ধ স্থান : খুলনায় বিভিন্ন বিনোদন স্পট ও প্রসিদ্ধ স্থান রয়েছে। বিনোদন স্পটের মধ্যে রয়েছে- নগরীর খালিশপুর ওয়াইজমেন্ট ওয়ান্ডার ল্যান্ড শিশুপার্ক, মুজগুন্নী শিশু পার্ক, জাহানবাদ ক্যান্টনমেন্ট শিশু পার্ক ও চিড়িয়াখানা, খানজাহান আলী সেতু, প্রেম কানন, হাদিস পার্ক ও জাতিসংঘ শিশু পার্ক। এছাড়া রয়েছে ঐতিহ্যবাহী কাস্টমঘাট, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, কুয়েট ক্যাম্পাস ও বিএল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ক্যাম্পাস, দৌলতপুর কৃষি কলেজ সংলগ্ন ছবেদা বাগান প্রভৃতি।

সর্বশেষ কথা : ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিক্ষা-সাহিত্য, শিল্প-বাণিজ্য ও খেলাধুলাসহ সব ক্ষেত্রেই রয়েছে খুলনার অসামান্য অবদান। খুলনা দেশের তৃতীয় বৃহত্তম শিল্প শহর ও দ্বিতীয় বৃহত্তম সামুদ্রিক বন্দর। দেশের বৈদ্যেশিক মুদ্রা অর্জনের দ্বিতীয় খ্যাত সাদা সোনা চিংড়ি ও সাদা মাছের আবাদ ভূমি খুলনা। এক সময়ের সোনালী অাঁশ খ্যাত পাটের সবচেয়ে বড় মোকামও এখানে। বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজসহ বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে এ জেলায়। দেশের ক্রীড়াঙ্গনেও রয়েছে এ জেলার মানুষের বিশেষ অবদান। ফুটবলের কিংবদন্তী জহিরুল ইসলাম, আব্দুল লতিফ, ফারুখ, আব্দুস সালাম মুর্শেদী, শেখ আসলাম, জসিমউদ্দিন জ্যোসি, রিজভী করিম রুনি, বায়েজিদ, অমিত, নিত্য, প্রশান্ত শেখ আকরাম, আনোয়ার হোসেন জুনিয়র, আনোয়ার হোসেন সিনিয়র, আফজালুর রহমান, মুনসুর (গোলরক্ষক), মুনসুর, টিপু, আবুল হাসনাত হাসি, রঘুনাথ সেন, অনুরধ্য, হালিম, জাহাঙ্গীর জুনিয়র, জাহাঙ্গীর সিনিয়র, মাসুম বিল্লাহ, ক্রিকেটার শেখ আব্দুস সাত্তার কচি, বাদশা, শেখ সালাউদ্দিন, আব্দুর রাজ্জাক, মাঞ্জারুল ইসলাম রানা, সাজ্জাদুর রহমান সেতু, বড় কবীর, ছোট কবীর, ফয়সাল, সাকিব আল হাসান, মাশরাফি বিন মর্তুজা, জিয়াউর রহমান, ডলার মাহমুদ, মোঃ মিথুন, সৌম সরকার, আনামুল হক ও পাভেল, মহিলা ক্রিকেটার সালমা, শুকতারা, নাদিরা ও ইতি, ভলিবল আইয়াজ খান, ইকবাল, ডলার, মুকুল, গফ্ফার, সাত্তার, জহির, মুক্তা ও সাইফুল ম্যারাথন মোঃ জহিরুল ইসলাম, বাস্কেটবল সেলিম চৌধুরী, আজমল আহমেদ তপন, আদিল, সোহেল ও হাবলু। এতকিছুর পরও এখনো খুলনা জেলা বিভিন্ন দিক দিয়ে পিছিয়ে রয়েছে। এ জেলায় নেই কোন বিমান বন্দর, পাইপ লাইনে গ্যাস সরবরাহ হয়নি এখনো। নিউজপ্রিন্ট মিলসহ অনেক শিল্প কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। শিল্পকলা একাডেমী নির্মাণ প্রকল্পটি ফাইলবন্দি হয়ে আছে। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এখনো ৫শ' শয্যায় উন্নীত হয়নি, পূর্ণাঙ্গতা পায়নি আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতাল। বাস্তবায়ন হয়নি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। এগুলো বাস্তবায়িত হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের অর্থনেতিক অগ্রগতির ধারা আরো এগিয়ে যাবে।